সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ১০:২৩ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
ব্যাংকঋণে এক অঙ্কের সুদহার উৎপাদনে গতি আনবে কি

ব্যাংকঋণে এক অঙ্কের সুদহার উৎপাদনে গতি আনবে কি

উৎপাদন খাতে ব্যাংকঋণের সুদের হার অনেকটা জোর করেই কমিয়ে দেয়া হলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দেশের ব্যাংকগুলোকে এখন ৯ শতাংশ সুদে শিল্প খাতে ঋণ দিতে হবে। গত মঙ্গলবার রাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শিগগিরই এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারির কথা। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে বুধবার প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, আগামী জানুয়ারির প্রথম দিন থেকে এই নতুন সুদহার কার্যকর হবে। বর্তমানে ব্যাংকভেদে উৎপাদন খাতে সুদহার ১১ থেকে ১৪ শতাংশ।
উৎপাদন খাতে ব্যাংকঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা হবে বলে সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে বহুবার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এর ফলে গত প্রায় এক যুগ ধরে নতুন বিনিয়োগবঞ্চিত শিল্প খাতে গতিশীলতা ফিরে আসবে বলে তাদের ধারণা। সরকারের আগ্রহের সুযোগ নিয়ে সুদহার এক ডিজিটে নামিয়ে আনার কথা বলে বিশেষ করে বেসরকারি ব্যাংকগুলো সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে বেশ কিছু সুবিধা আদায় করে নিয়েছে; কিন্তু তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েও সুদহার কমায়নি। মধ্য থেকে জনগণের কষ্টার্জিত সাড়ে ২৫ হাজার কোটি টাকার অনৈতিক সুবিধা তারা ভোগ করেছে গত দেড় বছরে। সুদের হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত দেড় বছরে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক দফায় দফায় ৯টি সুবিধা দিয়েছে ব্যাংকগুলোকে; কিন্তু সরকারি ব্যাংক এবং দুয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক ছাড়া অবশিষ্ট ব্যাংকগুলো ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামায়নি। অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, সুদহার এক অঙ্কে না এলেও ৯টি সুবিধার মাত্র চারটিতেই ব্যাংকগুলো ২৫ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা পেয়েছে।
ব্যাংকগুলোর প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক একরকম বাধ্য হয়েই প্রজ্ঞাপন জারি করে সুদহার এক অঙ্কে বেঁধে দেয়ার সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছে। এখন ব্যাংকারদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সুদহার কমানো হলে প্রতিটি ব্যাংকের আয় ১৫০ কোটি টাকার বেশি কমে যাবে। ফলে ব্যাংকগুলোর মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে রাজস্ব আদায় ও শেয়ারবাজারেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কিন্তু এই বক্তব্য তারা আগে কেন সরকার তথা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে তুলে ধরেনি, সেটি একটি প্রশ্ন হয়ে থাকবে। কেন তারা সুদহার কমানোর প্রতিশ্রুতি দিলেন এবং এর বিপরীতে বিশেষ সুবিধা নিলেন? কেন সুবিধা নিয়ে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলেন? ট্যাক্সদাতা জনগণের এসব প্রশ্ন করার অধিকার নিশ্চয়ই আছে।
সুদহার এক অঙ্কে নির্ধারণের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিদ্ধান্ত নেয়ার পর এখন অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মুক্তবাজার অর্থনীতির দেশে এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা। পত্রিকার খবর অনুযায়ী, ব্যাংক খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে ব্যাংকগুলোর আয়ে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তারা আরো বলেন, সরকারের ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করলে সাড়ে আট শতাংশ সুদ পাওয়া যায়। আবার ব্যাংকভেদে আমানতের সুদহার সাড়ে ৫ থেকে সাড়ে ১১ শতাংশ পর্যন্ত। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলো কেন ঝুঁকি নিয়ে উৎপাদন খাতে ঋণ দেবে? তাই সুদের হার এক অঙ্কে নামলে উৎপাদন খাতের উদ্যোক্তারাই সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়বেন, যার প্রভাব পড়বে রাজস্ব আয় ও শেয়ারবাজারেও।
আমরাও মনে করি, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে অর্থনীতির চালিকাশক্তিগুলোকে বাজারের স্বাভাবিক গতিতেই চলতে দেয়া উচিত। সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের হাত ধরে সেই ’৯০-এর দশকের শুরুর দিকে বা তারও আগে বাজার অর্থনীতির সূচনা হয়েছিল এবং শৃঙ্খলাবিধি প্রণীত হয়েছিল। তার বিভিন্ন সংস্কার কর্মসূচির সফল প্রয়োগের কারণেই সাম্প্রতিককালে দেশের অর্থনীতিতে অগ্রগতির একটি সোপান রচিত হয়; কিন্তু গত এক যুগে ব্যাংকসহ অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে সেই শৃঙ্খলা ধসে পড়েছে। সুশাসনের পরিবর্তে রাজনৈতিক বিবেচনা, দলীয় প্রভাব ও সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রতিটি খাতে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। ব্যাংকঋণের সুদহার নির্দিষ্ট করে দেয়ার সিদ্ধান্তও তেমনই একটি ক্ষতিকর সিদ্ধান্ত হিসেবে ভবিষ্যতে চিহ্নিত হবে না, তা বলা যায় না।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877